আজ রবিবার, ১৪ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কী না.গঞ্জ বিএনপি?

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

সময় পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। নেতায় নেতায় কোন্দল বেড়েই চলেছে। মাঠপর্যায়ের কর্মীরা দলের চেয়ে পছন্দের নেতাকেই বেশী প্রাধান্য দিচ্ছে। নেতা মাঠে থাকলে কর্মীগনও মাঠে থাকছেন। নেতারা নিজেদের প্রভাব ঠিক রাখতে বিভিন্ন সময় দলের স্বার্থের বিষয় ভুলে গিয়ে দলের বিপক্ষে কাজ করছেন। অনেকে আবার ঘোর বিরোধী সরকারি দলের ছায়ায় বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন অবলীলায়। এ নিয়ে সাধারন মানুষের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া। জনগন ধীরে ধীরে বিএনপি নামক দলটিকে ফেসবুক দল হিসেবে বিবেচনা করছে। এখনই ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে এ দলটি হারিয়ে যেতে পারে ইতিহাসের পাতায়। দলের নামও মানুষের মন থেকে মুছে যেতে বেশি সময় লাগবে না। নিজেদের কর্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, আধিপত্য ফিরিয়ে আনতে বিশেষ কোন পরিকল্পনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় জেলার বাঘা বাঘা নেতাদের সাথে। তাদের মধ্যে কয়েকজন কথা বলেন সংবাদচর্চার সাথে।

এ বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এড. তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, দলের এই দুঃসময় থেকে ছুটে আসতে হলে প্রকৃত জাতীয়বাদী যারা তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। চিহ্নিত করা ও ফর্মুলা তৈরী করতে হবে। যারা নির্বাচনে সরাসরি দলের পক্ষে কাজ করেছেন। যারা দলের বিপক্ষে কাজ করেছেন তাদেরকেও চিহ্নিত করতে হবে। যারা বিরুদ্ধে অবস্থান করছে তাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করতে হবে। যারা দলের পক্ষে কাজ করেছে তাদেরকে দায়িত্ব দিতে হবে। তবেই দুঃসময়ে দলের পক্ষে লোকগুলি থাকবে। দুঃসময়ে যারা থাকে তারাই প্রকৃত কর্মী। কিছু সুযোগ সন্ধানী ও সুবিধাবাদী লোক আছে তারা কমিটি শিকার ও অর্থ শিকারের সময় আসেন। দলকে আরও দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতামূলক হতে হবে। অনেক নেতা আসে বড় বড় পদ নিয়ে বসে থাকেন। তাদেরকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। জেলা ও মহানগরের অনেক বড় বড় নেতারা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদেরও লজ্জা থাকা উচিত। পদপদবী থাকা স্বত্ত্বেও দলের বিরুদ্ধে তারা কিভাবে অবস্থান নেয়? দলের পক্ষ থেকেও একটা শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশনেত্রী বর্তমানে জেলখানায়। যারা দলকে ভালোবাসে তারা দলের পক্ষে অবস্থান নেবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, তদন্ত করা হচ্ছে। রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। দলের যে সব দুর্বলতা আছে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাংগঠনিক কার্যক্রমের দিকে বেশি মনযোগ দেয়া হচ্ছে। যে সকল অঙ্গসংগঠনের কমিটি মেয়াদ উত্তির্ণ রয়েছে। ওয়ার্ড, থানা, ইউনিয়ন, উপজেলা কমিটিগুলো ঠিক করা চেষ্টা চলছে। এভাবেই নিজেদের ছোটখাট দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমাদের যে নাজুক অবস্থাটা দেখা যায় সেটা মূলত কঠিন ফ্যাসিস্ট সরকারের তোপের মুখে আছে। তোপের মুখেই আমাদের এ অবস্থা দেখা যাচ্ছে। জনসমর্থন বা সাংগঠনিক ক্ষমতার ফলেই বার বার ক্ষমতায় এসেছে ও সফলতার সাথে দেশও পরিচালনা করেছে। যেহেতু দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থাই চলছে। পক্ষান্তরে বলা যায় একটা একদলীয় সরকারের অধীনে ও স্বৈরশাসনের অধীনে কারও স্বাধীন মত প্রকাশ করার সুযোগ থাকে না। সেই হিসেবে মনে হচ্ছে আমরা দুর্বল। মনে হয় আমরা হতাশার মধ্যে আছি। কিন্তু তা না বিএনপি থেকে তো কেউ চলে যায় নাই। সরকারের নিপীড়ন সহ্য করে বিএনপির লোকজন দলকে ধরেই রাখছে।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, আসলে পরিস্থিতি নাজুক তো দেশের। সেখানে বিএনপি তো দেশের একটা পার্ট মাত্র। দেশের মানুষের রাজনীতিচর্চার করার যে অধিকার তা কোথায়? মানুষের বাক স্বাধীনতা নাই। সাংবাদিকরা ইচ্ছে করলেই তারা স্বাধীনভাবে কিছু লিখতে পারে না। মানুষ ভোট দিতে পারে না। বিএনপি যে পরিস্থিতির মোকাবেলা করছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের সকল মানুষকে যোগ দিতে হবে। এটাকে ভোটের নামে তামাশাও বলবো না। এত বড় ধরনের একটা কাজ করতে পারে বিএনপি তো এটা কল্পনাও করতে পারে নাই। যে কোন মানুষই কল্পনাই করতে পারে নাই। যদি এমন হতো দেশের নির্বাচনে ২টা ৫টা আসনে একটু এদিক সেদিক হইছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হইছে। এগুলোকে মানুষ ভাল বলে নাই। সেটা যেই সরকারের আমলেই হোক না কেন? এবার তো ৩শ আসনেই যে কাজটা হইলো। এটা তো বিএনপি নাজুক অবস্থায় না, দেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সারা দেশের মানুষ স্তম্বিত। যে স্তম্বিত অবস্থা সারা দেশের মধ্যে বিরাজ করছে। তা থেকে উত্তোরনের জন্য বিএনপিকে তাদের পরিকল্পনাকে নির্ধারন করতে হবে। কিভাবে এটা করা যায়? বিএনপি সেটাই করছে। এবারের পরিস্থিতি তো দেশের মানুষকে অতীতে দেখতে হয় নাই। মোকাবেলাও করতে হয় নাই। দেশের মানুষের ভোটাধিকার, মৌলিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা এগুলোকে সঠিক রাস্তায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বিএনপি তা নিয়েই কাজ করছে। বিএনপি বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা অবশ্যই করবে।